কটিয়াদীতে গরু চুরির প্রতিবাদ করায় বিধবা নারীকে মারধোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

আব্দুর রউফ ভুঁইয়া : কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি-কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গরু চুরির প্রতিবাদ করায় এক বিধবা নারীসহ তার তার স্বজনদের মারধোর, বাড়িঘরে ভাঙচূর ও লুঠপাট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার প্রতিবাদে ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ভুক্তভোগী নারী ফরিদা খাতুন (৪৩) আজ বুধবার দুপুরে তার বাবার বাড়ি কটিয়াদীর উপজেলার সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা ছাড়াও ঘটনায় আহত তার চার ভাই মো. হানিফ মিয়া (৪২), শরীফ মিয়া (৪০), বিল্লাল মিয়া (৩৮), নাসিম মিয়া (৩৭) ও ভাতিজা সোহেল মিয়া (২৫) উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১৬ মে (শুক্রবার) দুপুরে ফরিদা খাতুনের স্বামীর বাড়ি কটিয়াদীর সহশ্রাম ধলদিয়ার রায়খলা এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহত নারী ফরিদা খাতুন বাদী হয়ে ২৬ মে (সোমবার) কটিয়াদী থানায় একই এলাকার লাল মিয়ার ছেলে শাকিব (২০), মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে সুরুজ মিয়া (৪৫) ও তার ভাই লাল মিয়া (৪২)সহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিনি ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক কষ্ট আর সংগ্রাম করে সংসার চালিয়ে আসছেন। গত ১৫ মে বৃহস্পতিবার রাতে তার একটা দেড় লাখ টাকা মূ্ল্যের গরু শাকিব সহ কয়েকজন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় গরুর শব্দে বিষয়টি আমি টের পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বাইরে গেলে চুরেরা আমার হাতে চাকু মেরে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে। বিষয়টি আমার ভাইদের জানালে পরদিন ১৬ মে শুক্রবার আমার বাড়িতে গিয়ে তার এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শাকিবসহ তাদের বাপ-ভাইয়েরা আমাদের ওপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। হানলাকারীরা শুধু আমাদের মারধোর করেনি। তারা আমার বাড়িঘর ভাঙচূর করে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এখন আমি আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছি। এ ঘটনায় মামলা করায় তারা আমাকেসহ পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ঘটনায় আমি খুবই আতঙ্ক ও দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমি এখন জীবনের নিরাপত্তা চাই।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৫ মে রাত পৌনে ১টার দিকে ফরিদার গরুর ঘরে হঠাৎ শব্দ পেয়ে ফরিদা ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার গরুটি প্রতিবেশি শাকিবসহ সহযোগীরা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ফরিদা এসময় বাঁধা দিলে দুর্বৃত্তরা ফরিদার বাম হাতের কঞ্জির ওপরের অংশে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এসময় ফরিদার ডাক চিৎকারে অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে আহত ফরিদার ভাই ভাতিজারা এ খবর শুনতে পেয়ে পরদিন শুক্রবার শাকিবকে জিজ্ঞেস করতে গেলে তাদেরকে উল্টো অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এসময় দা ও রড দিয়ে তাদের এলোপাতারি কোপানোসহ বেদম প্রহার করা হয়। এতে ফরিদাসহ তার অন্তত ছয় থেকে সাতজন স্বজন আহত হন। পরে আসামিরা ফরিদার বসত ঘরের দরজা জানালাসহ ঘর ভাঙচুর করে প্রায় তিন লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং ঘরে আলমারিতে রাখা প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের দেড় ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন, ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের আট আনা ওজনের এক জোড়া কানের দুলসহ আরো নগদ চল্লিশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং এ বিষয়ে যদি কোনো বাড়াবাড়ি করে বা মামলা করে তাহলে ফরিদা ও তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।
এ বিষয়ে কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে অপর পক্ষ থেকেও মঙ্গলবার রাতেও আরেকটি কাউন্টার মামলা হয়েছে।