তালায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মান : সরকারি জায়গা জবর দখল

শফিকুল ইসলাম, তালা ( সাতক্ষীরা ) প্রতিনিধি :তালায় সরকারি জায়গা জবর দখল করায় অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মানের অভিযোগ উঠেছে। পাশে খাস জমি থাকলেও সেটি আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির এক নেতা এই খাস জমি জবর দখল করে রাখায় পিচের রাস্তার হজিং কেটে এই ড্রেন নির্মান করা হচ্ছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসন বলছে সরকারি জমি না থাকায় এই কাজ করা হচ্ছে। কিন্তু এলাকা বাসীর দাবী ড্রেন ছিল রাস্তা ছাড়া ২০ ফুট দুরে সরকারি জমির উপর দিয়ে। যেটি জলিল দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছে। দখলদার ব্যক্তি হলেন তালা হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে আশ্রিত আনার আলী রিফুজির ছেলে আব্দুল জলিল। জমি জবর দখল ছাড়াও সে ভুয়া উকিল সেজে তালা সেটেলমেন্ট অফিস থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিগত দিনে তালা উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে এলাকাবাসীকে জানিয়েছিল রাস্তা ছাড়া ১০ ফিট বাহিরে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। এই আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই ঘোষনাকে তোয়াক্কা না করেই বহাল তবিয়াতে আছে আব্দুল জলিল। তাই এই অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মান না করে পরিকল্পিত ড্রেন নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ায় ভারত অঞ্চল থেকে অনেক ভুমিহীন উদবাস্তরা তৎকালীন পাকিস্তানে পাড়ি জমায়।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ সকল উদবাস্তদের থাকার জন্য তৎকালীন সরকার একটি করে রিফুজী কলোনী তৈরি করেন। তার একটি কলোনী বতর্মান তালা উপজেলা সদরে সরকারি গালর্স স্কুলের দক্ষিন পাশে নির্মিত হয়। সেই নির্মিত কলোনীতে অনেক গুলো পরিবা বসবস করতো। তার মধ্যে মোহাম্মদ মুটি গং, আনার রিফুজী গংরাও বসবাস করতো। এই আনার রিফুজীর বংশোধর হলো আজকের এই আব্দুল জলিল। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের অবহেলায় কলোনীতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সেখান থেকে আশ্রিত পরিবার গুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এক পর্যায় তালা ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় বসবাস শুরু করে। কিছু দিন থাকার পর যতদুর জানাযায় তৎকালীন তালা সদর ৬ নং ইউনিয়নের জননন্দিত প্রভাশালী ইউপি চেয়ারম্যন শেখ তয়েজ উদ্দীন সাহের তৎকালীন ইউপি সদস্য মীর আব্দুল মালেক (ছুটো) কে এই আনার রিফুজীকে থাকার জায়গা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন ইউপি সদস্য মীর আব্দুল মালেক (ছুটো) ইউপি চেয়ারম্যান কে জানান তালা উপ শহরের ৩ টি ভ্রাম্যমান লাশ বর্তমান হাসপাতালের দক্ষিন পাশে দাফন করা এবং কাঠের তৈরি একটি দোকানও আছে ওখানেই স্বল্প পরিসরে খাস জায়গা আছে সেখানেই তাদের জায়গা দেওয়া যাবে। সেই থেকে আনার রিফুজীর পরিবার ঐ জায়গাতে বসবাস করে আসছে। যেখানে মাটি খুড়লে এখনো ৩ টি লাশের কংকাল পাওয়া যেতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারনা করছেন।
তালা উপজেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি ও তালা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হাকিম জানান, আব্দুল জলিল যে জায়গাটিতে বসবাস করে সেটির মধ্যে খাস জমি আছে এবং ঐ খাস জমিতে ৩ টি কবরও আছে। আগের দিনে পানি সরবরাহের জন্য যে ড্রেনটি ছিল সেটি জলিলের বাড়ির ভিতর দিয়ে ছিল। সেটি সে দখল করে রাস্তার উপর দিয়ে ড্রেন হবে এইটা মানা সম্ভব না। তাছাড়া বিগত দিনে উপজেলা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর সরকারি জায়গা উচ্ছেদের আবেদন করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসক মহোদ্বয় সহকারী কমিশনার ভুমি বরাবর মাপ-জরিপের লিখিত নির্দেশ দিয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার মাপ জরিপের দিনধায্য করে তালা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক উপস্থিত থাকার জন্য একটি লিখিত চিঠি প্রেরণ করে ছিল। তারপর আর কোন মাপ- জরিপ না করেই ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তাহলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশের কি মুল্য হল।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোঃ রাসেল বলেন, এডিবির উন্নয়ন মুলক কাজের জন্য এই ড্রেনটি করা হচ্ছে। যেহেতু অর্থ বছর শেষ। কাজটি না করলে টাকা ফেরৎ যাবে ঠিকাদার বিপদে পড়বে। রাস্তা ছাড়া ১০ ফুট দুরে স্থাপনার প্রশ্মের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি কাজে ১০ ফুটের কোন প্রয়োজন নেই। তবে ড্রেনটি উচু না করে মাটি বরাবর করতে বলেছি। ড্রেন নির্মানের পরেই মাপ- জরিপ করা হবে বলেও এই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান।