চরফ্যাশন-মনপুরায় জনপ্রিয়তার পাল্লা ভারী হচ্ছে নূরুল ইসলাম নয়নের

কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা- ভোলা-৪, চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির দুই হেভিওয়েট নেতার পক্ষে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে এবং পাল্টাপাল্টি কর্মস‚চি পালন করে আসছে তাদের নেতাকর্মীরা। এসব কর্মস‚চিতে এক পক্ষ অপর পক্ষে বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও নানা অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছে। এ নিয়ে এলাকায় যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে এ আসনটিতে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই হেভিওয়েট নেতা হলেন, নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের নেতা চরফ্যাশন-মনপুরা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. নাজিম উদ্দীন আলম। এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও চরফ্যাশনের কৃতি সন্তান মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন।
সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম এই আসনটি ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন স্থানীয় ছেলে হিসেবে এ আসনটিতে প্রথম বারের মতো নেতৃত্ব দিতে চান।
সরেজমিনে দেখা যায়, চরফ্যাশনে বিএনপি এখন দুই ভাগে বিভক্ত। আলম ও নয়ন গ্রæপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষ ও দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনসহ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। স¤প্রতি চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও যুবদলের কমিটিতে নয়নপন্থিরা পদ পাওয়ায় দলের তরুণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে নূরুল ইসলাম নয়নের বর্তমানে আধিপত্য অনেকটা বেড়েছে।
এদিকে গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সভা-সমাবেশ করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো নাজিম উদ্দীন আলমের পক্ষে। দল থেকে চতুর্থ বারের মতো নাজিম উদ্দীন আলম মনোনয়ন পেলে চরফ্যাশন ও মনপুরায় জয়ী হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করবেন বলে নানা প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন জণগণকে তার পক্ষের নেতা-কর্মীরা।
অন্যদিকে গত ৫ আগষ্টের আগ থেকে চরফ্যাশন-মনপুরায় সভা-সমাবেশ করে বিএনপির প্রচারণা চালানো সহ কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম নয়নের পক্ষের নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় ছেলে হিসেবে এবং দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে চরফ্যাশন ও মনপুরা এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করবেন বলে জণগনকে প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন।
জানা যায়, সাবেক এমপি নাজিম উদ্দীন আলম গ্রæপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মালতিয়া, উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আ.ন.ম আমিরুল ইসলাম মিন্টিজ মিয়া, উপজেলা সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারন সম্পাদক মীর ছায়েদু রহমান প্রমুখ।
অপর দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন গ্রæপের পক্ষে চরফ্যাশনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন টিপু, কয়ছর আহমেদ কমল, উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক গোফরান মহাজন, সাবেক সহ সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা জিয়া পরিষদের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট খন্দকার রেজাউল করিম, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মন্জুর হোসেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহŸায়ক সিকদার হুমায়ুন কবির, চরফ্যাশন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সোহেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল ইসলাম ভুট্টু প্রমূখ।
নাজিম উদ্দীন আলমের নেতৃত্ব দেয়া চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন মালতিয়া জানান, নাজিম উদ্দিন আলমের সবচেয়ে বড় শক্তি তৃণম‚লের নেতৃত্ব তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি তিন বার এমপি ও দীর্ঘ সময় চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকায় নেতৃত্বের আগাগোড়া তার হাতেই তৈরি। তাছাড়া সাধারণ জনগণের মাঝে নাজিমউদ্দিন আলমের বেশ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচনে নাজিম উদ্দীন আলমকে দল মনোনয়ন দিবে। আমরা তার পক্ষে চরফ্যাশনে কাজ করছি।
নূরুল ইসলাম নয়নের নেতৃত্ব দেয়া উপজেলা পৌর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ¦ হেলালউদ্দিন টিপু বলেন, চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম এ আসনে তার আমলে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন কর্মকাÐ করতে পারেননি। এমনকি দলের দুর্দিনে নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবরও রাখেননি তিনি। সবকিছু বিবেচনায় আগামী নির্বাচনে এ আসনে নাজিম উদ্দীন আলমের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সন্তান মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়নকেই নিশ্চয়ই দল মনোনয়ন দিবে আমরা বিশ্বাস করি। বর্তমানে চরফ্যাশন ও মনপুরায় বিএনপিতে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব খুব প্রয়োজন। সেই হিসাবে নূরুল নয়নকে বিএনপির তৃনমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী সহ সাধারন জনগণ চায়। তাই আমরা তার পক্ষে কাজ করছি।
এছাড়া গত ২৭ জানুয়ারী চরফ্যাশন-মনপুরার মা, মাটি ও মানুষের সন্তান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়নকে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে যে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তার দেওয়া সোহার্দপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তার সেই সোহার্দপূর্ণ বক্তব্যগুলো দলীয় ও সাধারন মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জম্ম দিয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির তৃণম‚লের একাধিক নেতা বলেছেন, দুই গ্রæপের নেতাকর্মীরা নিজেদের নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে এক গ্রæপ অপর গ্রæপের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। এতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। সব মিলিয়ে এ আসনে বিএনপি এখন দু’গ্রæপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী নূরুল ইসলাম নয়ন বলেন, গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনে আমার পক্ষের নেতাকর্মীদেরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় মতে আমি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দিয়েছি যে-দখলদার, ও চাঁদাবাজদের স্থান বিএনপিতে নেই। কোন অপরাধীদের জাগা বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের নেই বা হবে না। সেই নির্দেশনা মতে নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ ও কর্মকাÐ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমি চরফ্যাশনের স্থানীয় সন্তান এবং রাজপথে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করে হামলা-মামলার সম্মুখীন হয়েছি। দলের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমি আশা করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তথা দলের সর্বোচ্চ কমান্ড এসব বিষয় নিশ্চয়ই বিবেচনা করবেন। আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। দল এ আসনে অবশ্যই আমাকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাছাড়া আমি চরফ্যাশনে বিএনপির কোনো হিংসা বিভেদ বা গ্রæপি চাইনা। আমরা দলের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এবং নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ব থাকার জন্য আহŸান জানিয়েছি। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার হয়েই আমরা কাজ করবো।
চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলা নির্বাচন অফিস স‚ত্র জানা যায়, চরফ্যাশন-মনপুরা উপজেলা নিয়ে ভোলা-৪ আসন গঠিত। এখানে ১টি পৌরসভা, ৫টি থানা এবং ২৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৫ জন।