বাদাম বিক্রি করে জীবনের ঘানি টানছেন মজিদ মুন্সি

এস কে সুজন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি- ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে বাদাম বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন মজিদ মুন্সি বয়স প্রায় ৭৫ বছর। ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। সেই শক্তিও নেই শরীরে। নিজ সন্তানেরা তার দেখভাল করেন না। তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না করে স্কুল,কলেজ ও হাটে বাজারে বাদাম বিক্রি করে বৃদ্ধা অসুস্থ স্ত্রীসহ দুজনের সংসারে জীবিকার ঘানি টেনে যাচ্ছেন তিনি । রাণীশংকৈল উপজেলার পৌরশহরের মধ্য ভান্ডারা গ্রামে বাসা তার। সংসার জীবনে দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে তার। তবে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে ভ্যান চালক, আরেক ছেলে কুলির কাজ করে। তারা দুজনেই নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। সন্তানরা দেখভাল করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন , দেখলে কি আর এই বয়সে আমাকে ঘাড়ে করে বাদাম বিক্রির কাজ করতে হতো ! সন্তানরা দেখেনা তাই আমি নিজেই ভিক্ষাবৃত্তি না করে মানুষের কাছে হাত না পেতে,এই কাজ করি। কারণ ভিক্ষা করা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণার কাজ,তাই বাদাম বিক্রির কাজ করি,এই বাদাম বিক্রির টাকা দিয়েই অতি কষ্টের মাঝেও অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে দুই জনের সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। যত দিন বেঁচে আছি কি করবো, বয়সের ভারে আর তো কিছুই করা সম্ভব না। আব্দুল মজিদের চোখে পুরানো ফ্রেমের পাওয়ারি চশমা, গায়ে পাতলা একটা পাঞ্জাবি,একটা হালকা সুইটার,মাথায় টুপি, লুঙ্গী ও পায়ে মুজাবিহীন একজোড়া নাগড়া জুতা, ঘাড়ে বাদামের ঢাকি নিয়ে এভাবেই বেড়িয়ে পড়েন পৌর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। গত ১০ বছর ধরে তিনি বাদাম বিক্রি করছেন। এতে প্রতিদিন তার দুই থেকে তিনশত টাকা আয়-রোজগার হয়। এ দিয়ে স্ত্রীর ঔষধসহ কোন মতে টেনেটুনে সংসার চলে মজিদ মুন্সির। সরকারি বয়স্ক ভাতার ব্যাপারে মজিদ মুন্সি জানান, জ্বি বয়স্ক ভাতা হয়েছে, তিন মাস অন্তর অন্তর কিছু টাকা পাই, তা দিয়ে কি আর সংসার চলে রে বাবা ! জিনিষপত্রের যে দাম। বাদাম বিক্রির কাজ না করলে কি যে হতো। আমার সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে যেত ।
এবিষয়ে পৌর শহরের অনেকে বলেন এতো বয়সে মজিদ মুন্সির বাদাম বেচে জীবিকা নির্বাহ সত্যিই প্রশংসনীয় ও দৃষ্টান্ত হয়ে রবে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক রকিবুল হাসান বলেন, সত্যিই এ বয়সে ওই বৃদ্ধার জীবিকা নির্বাহ বিরল ও প্রশংসনীয়। তার সাথে কথা বলে, কিভাবে সহযোগিতা করলে তার জন্য ভালো হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।