পেকুয়ার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ

মো,সাইফুল ইসলাম খোকন,চকরিয়া(কক্সবাজার).
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে লাগামহীন অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের সংস্থাপন শাখার অদৃশ্য শক্তির যোগসাজশে তিনি টানা ১৪ বছর ধরে বহাল তবিয়তে রয়েছেন একই স্টেশনে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কী মধু আছে টইটং ইউনিয়ন পরিষদে। তা নাহলে সচিব আবদুল আলীম কেন এক যুগের বেশি সময় ধরে টইটং ইউনিয়ন পরিষদে রয়ে গেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীর চত্রছায়ায় টইটং ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করে নানাখাতে অনিয়ম দুর্নীতি করে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। গত ১৩ মার্চ টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার (ইউপি সদস্য) শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী বাদি হয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে ইউপি সচিব আবদুল আলীমের নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও সেবাপ্রার্থী জনসাধারণকে হয়রানি করার চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন আবেদনকারীর লিখিত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( উন্নয়ন ও মানবসম্পদ) রুবাইয়া আফরোজকে নির্দেশ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে আবেদনকারী শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী বলেন, ১৪ বছর আগে শুন্য পকেটে আবদুল আলীম টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পরিষদকে জিন্মি করে নানাখাতে অনিয়ম দুর্নীতি এবং গ্রাম আদালতের মামলার রায় টাকার বিনিময়ে নয়ছয় করে বিচার প্রার্থী জনগণকে হয়রানি করে আসছেন। জেলা প্রশাসকের সংস্থাপন শাখার কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরীর অনুকম্পায় তিনি টানা ১৪ বছর ধরে টইটং ইউনিয়ন পরিষদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় লোকজন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউপি সচিব আবদুল আলীম পরিষদের অধীন বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, পঙ্গু ভাতার তালিকা তৈরীকালে সুবিধাভোগীর কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা, ভিজিএফ কার্ড দেয়ার নামে পাঁচ হাজার টাকা, জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে জনপ্রতি চারশত টাকা, জাতীয়তা সনদ দিতে দুইশত টাকা এবং সরকারি যেকোন ধরনের ১০ টাকা দামের সেবা দিতে কৌশলে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া এমন নজিরও আছে, টাকা না দিলে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতের একটি মামলা প্রায় ৩ বছর ধরে আটকে রেখেছেন। এধরণের অভিযোগ তদন্ত করলে অহরহ ধরা পড়বে বলে লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা ১৪ বছর টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব পদে দায়িত্ব পালন করে পরিষদের নানাখাতে অনিয়ম দুর্নীতি করে আবদুল আলীম অটেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন বলেও লিখিত অভিযোগে তুলে ধরেছেন আবেদনকারী শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী। অভিযোগ সুত্রে প্রকাশ, অনিয়ম দুর্নীতির টাকায় ইউপি সচিব আবদুল আলীম চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নে নিজ গ্রামে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে বিলাশ বহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। নিজ নামে কিনেছেন চিংড়ি প্রজেক্ট, ফাসিয়াখালীসহ বিভিন্ন মৌজায় কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি। দেড় কোটি টাকা খরচ করে চকরিয়া শহরে ৫ কাটা করে তিনটি প্লট কিনেছেন তিনি। চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরীর সহযোগিতায় টইটং ইউনিয়নে অন্তত ৫০ একর সরকারি বনভূমি তিনি কিনে নিয়েছেন। সেখানে গড়ে তুলেছেন বিলাশ বহুল বাগান বাড়ি।
সাবেক ইউপি মেম্বার শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী লিখিত অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের নৌকার টিকেটে নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরীর দাপটে বিগত সময়ে ইউপি সচিব আবদুল আলীম পরিষদের মেম্বারদের জিন্মি করে কর্মবিহীন করে রেখে নিজস্ব লোক দিয়ে কমিটি করে ইউনিয়ন পরিষদের সব কাজ তাদের দিয়ে করিয়াছে। নামেমাত্র নির্বাচিত মেম্বারদের দিয়ে উন্নয়ন বরাদ্দের বিপরীতে কাজ করার পর বিলের টাকা সচিব আবদুল আলীম কেড়ে নিয়েছেন।
এমনকি অভিযোগকারী শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী বিগত সময়ে ইউপি মেম্বার থাকাকালে তিনিসহ পরিষদের আরও অনেক ইউপি সদস্যের তিনবছরের বেতন-ভাতার সমুদয় টাকা সচিব আবদুল আলীম চেয়ারম্যানের যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন।
ইউপি সচিব আবদুল আলীম কতৃক এসব অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনায় ইতোপূর্বে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনধরনের প্রতিকার পাননি বলে লিখিত অভিযোগে দাবি করেন আবেদনকারী শাহাদাত হোসাইন চৌধুরী। তিনি বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী তদবির করে বারবার এসব অভিযোগ ধামাচাপা দিয়ে সচিবকে জবাবদিহিতা থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। বিগত সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের গরীবের জন্য দেওয়া সরকারি চাল চুরির ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বরখাস্ত হলেও এই অপকর্মে সহযোগিতাকারী ইউপি সচিব আবদুল আলীম রয়ে গেছেন ধরাচোয়ার বাইরে। এসব কারণে গেল ১৪ বছর ধরে টইটং ইউনিয়নের জনসাধারণ দুর্নীতিবাজ ইউপি সচিব আবদুল আলীমের কাছে জিন্মি হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন আবেদনকারীসহ ভুক্তভোগী লোকজন।
একইভাবে গত ২৬ জানুয়ারি ইউপি সচিব আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে গোলাম কাদের নামের এক ভুক্তভোগী বাদি হয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মছন্যাকাটা এলাকার মৃত নুরুল আমিনের ছেলে গোলাম কাদের দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনি শীলখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক (এসিল্যান্ড) নুর পেয়ারা বেগমের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ওই অভিযোগটি তদন্তের জন্য সচিব আবদুল আলীমকে দেওয়া হলে তিনি (ইউপি সচিব) কৌশলে বিবাদিপক্ষ থেকে সুবিধা নিয়ে তাঁকে বিচার বঞ্চিত করেন বলে লিখিত অভিযোগে ইউএনওকে নালিশ দেন ভুক্তভোগী গোলাম কাদের।
এ অবস্থায় ভুক্তভোগী টইটং ইউনিয়নের জনসাধারণ অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ ইউপি সচিবের শাস্তিমূলক বদলির দাবি জানিয়েছেন জেলা প্রশাসকের কাছে।