পাহাড়ে খাদ্যশস্য বরাদ্দে নজিরবিহীন বৈষম্যের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে পার্বত্য উপদেষ্ঠার কুশপুত্তলিকা দাহ

আলমগীর মানিক,রাঙামাটি-পাহাড়ের দরিদ্র জনগোষ্ঠির ভাগ্যোন্নয়নে সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ বিতরনে পার্বত্য মন্ত্রণলালয়ের নজিরবিহীন বৈষম্যের প্রতিবাত জানিয়েছে রাঙামাটির সর্বস্তরের মানুষজন।
পাহাড়ে খাদ্যশস্য বরাদ্দের নামে বৈষম্যের সৃষ্টির প্রতিবাদ জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমার জুতার মালা পরিহিত কুশপুত্তলিকা দাহ করে ও টায়ার জ্বালিয়ে পার্বত্য রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ করেছে সচেতন ছাত্র-জনতা।
শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে রাঙামাটি শহরের পৌর চত্ত্বর থেকে উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমার বিরুদ্ধে নানান শ্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপাস্থ ট্রাফিক বক্সের কাছে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের বহুল বিতর্কিত উপদেষ্ঠা সু-প্রদীপ চাকমার গলায় জুতার মালা পরিহিত কুশপুত্তলিকায় আগুন দেওয়া হয়।
এরআগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাহাড়ের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত প্রায় ৮ কোটি টাকার বরাদ্দ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা সু-প্রদীপ চাকমা তার নিজের স্বজন ও পলাতক আওয়ামীলীগের নেতাদেরসহ পাহাড়ের আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্টপোষকদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন। বৈষম্য দূরীকরণের অঙ্গীকারাবদ্ধ বর্তমান সরকারের আমলে সরকারেরই একজন উপদেষ্ঠা পাহাড়ে নতুন করে বৈষম্যের সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারিরা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাহাড়ের জনগণের সাথে বৈষম্য চালিয়ে সম্প্রতি যে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা সংবিধানের সাম্যের নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত সাম্প্রতিক বাজেট বরাদ্দ তালিকা পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, এই বরাদ্দ প্রক্রিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, পক্ষপাতদুষ্ট এবং এক বিশেষ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীভূত। রাষ্ট্রের সম্পদ কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এটি সকল নাগরিকের সমান অধিকার। অথচ পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রদায়িক উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমা পাহাড়ি অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রকৃত চিত্র ও প্রয়োজন উপেক্ষা করে একপাক্ষিক বরাদ্দ প্রদান করেছে, যা চরম বৈষম্যমূলক। উপদেষ্টার বৈমষ্যমূলক আচরনে ভবিষ্যতে তার রাঙামাটিতে আগমন ঘটলে গাড়ি বহর আটকানোর হুমকিও দিয়েছেন বক্তারা।
পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের এই চাকমা মার্কা বরাদ্দ অবিলম্বে বাতিল করে পাহাড়ি-বাঙালি সকল জাতিগোষ্ঠীকে জনসংখ্যা অনুপাতে সমান ভাবে বরাদ্দের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় পার্বত্য উপদেষ্টা সু-প্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাকে পার্বত্য অঞ্চলের কোথাও ডুকতে দেওয়া হবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে আসবে সেখানেই প্রতিরোধ করবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সদাজাগ্রত ছাত্র-জনতা।
এদিকে পার্বত্য উপদেষ্ঠা পাহাড়ে নতুন করে জাতিগত বৈষম্য সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন রাঙামাটি জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃবৃন্দ। জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু ও রাঙামাটি জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল আলীম উভয়েই বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে পার্বত্যাঞ্চলে পার্বত্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে; সেটি শুধুমাত্র বৈষম্য-ই নয় এটা এক ধরনের সংঘাত সৃষ্টির উষ্কানি। অপরিপক্ক ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বরাদ্দ প্রদান করে অত্রাঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ১৩টি জাতিগোষ্টিকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ে উৎসব শুরুর প্রাক্কালে এই ধরনের বৈষম্যমূলক বরাদ্দ প্রদানে অত্রাঞ্চলে বসবাসরত জাতিগোষ্টিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেছেন জেলা জামায়াতের আমীর।