সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে দিনাজপুরে বিভিন্ন মামলার আসামি ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভিযোগ

দিনাজপুর প্রতিনিধি- সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর (২৯৩৬) এর সভাপতি জি. এম. হিরু ও সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপনের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্ত স্কুলশিক্ষক ও একাধিক মাদক মামলার আসামিদের ইউনিয়ন সদস্য বানিয়ে (পিআইবি) প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ এর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করানোর অভিযোগ উঠেছে। আর এই প্রশিক্ষণ নিয়ে দিনাজপুরে সাংবাদিক মহলে চলছে গুঞ্জন।
১৯ থেকে ২১ মার্চ (২০২৫) দিনাজপুর সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে (পিআইবি) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এর আয়োজনে ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সহোযোগিতায় ৩ দিন ব্যাপী অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিং প্রশিক্ষণে আয়োজন করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর এর সভাপতি জি এম হিরু ও সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপন (পিআইবি) প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশকে ধোঁকা দিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার এর দোসর, প্রিন্টিং প্রেস মালিক, ব্যবসায়ী, এনজিও কর্মী, স্কুলের শিক্ষক ও মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের ইউনিয়নের সদস্য বানিয়ে এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করিয়েছেন।
ঘটনাটি প্রকাশ পায় ২০ মার্চ, প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিনে, দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলাম সরেজমিনে পরিদর্শনকালে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয় যাচাই করেন। এ সময় কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী নিজেদের সাংবাদিকতার পাশাপাশি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা হয় শিক্ষকতা করবেন নয়তবা সাংবাদিকতা করবেন, আপনাদের যেকোনো একটি পেশায় থাকতে হবে, ‘‘শিক্ষকতাও করবেন আবার সাংবাদিকতাও করবেন’’ এই দুটো একই সাথে চলতে পারে না, এটি সরকারি নীতিমালার পরিপন্থি।
সরকারি বিধি অনুসারে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা কোনো আর্থিক লাভজনক পদে বা দ্বৈত চাকরিতে থাকতে পারেন না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০২২ (অনুচ্ছেদ ১১.১৭), মাদ্রাসা নীতিমালা ২০১৮ (অনুচ্ছেদ ১১.১০(ক) এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালা ২০১৮ (অনুচ্ছেদ ১৫.১) এ এই নিষেধাজ্ঞা স্পষ্ট।
এ বিষয়টি দিনাজপুর নবাগত জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মোঃ আলাউদ্দীন আল আজাদকে অবগত করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রীয় নীতিমালা উপেক্ষা করে স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের সুবিধা দেন এবং প্রতিবাদকারীদের সকল সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন এবং কৌশলে সদস্য পদ থেকেও সরিয়ে দেন। একাধিক সাংবাদিক দাবি করেন, তাদের কাছে শুধু সদস্য সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ, গুণগত মান নয়। অভিযোগ রয়েছে এই ইউনিয়ন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এমন অযোগ্য ব্যক্তিদের নিজেদের স্বার্থে সদস্য বানিয়েছেন যারা সংবাদ লিখতে ও পড়তেও অক্ষম।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক ইউনিয়ন দিনাজপুর (২৯৩৬) এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাংবাদিক আব্দুস সালাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক নির্যাতন সহ্য করে এই ইউনিয়নকে আঁকড়ে ধরে আছি, কিন্তু আজ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো নির্বাচন নাই। নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এই পর্যন্ত নির্বাচন দেওয়া হয়নি, প্রকৃত সাংবাদিকদের বাদ দিয়ে গোষ্ঠীবাদী সদস্য বানিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন এই ইউনিয়নের সভাপতি জি এম হিরু ও সাধারণ সম্পাদক মাহফিজুল ইসলাম রিপন। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায় পলাতক স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে তাদের এই কার্যক্রমের পার্থক্য কোথায়।
বঞ্চিত সাংবাদিকরা প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এবং তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ জানান।