# Tags

পীরগাছায় সমিতির গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও পরিচালক ও ম্যানেজার

পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধিঃ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ৮ কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপন করার অভিযোগ উঠেছে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামের একটি সমিতির পরিচালক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী বাজার ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় শাখা খুলে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে তাঁরা এ টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে বেশ কিছু ভুক্তভোগী পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপাড়া গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে জনি মিয়া পীরগাছা উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রেশন করে সাকসেস বিজনেস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. নামে একটি সমিতি খোলেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৩৩/১৮। পরে জনি মিয়া পীরগাছা উপজেলার চৌধুরাণী বাজার ও পার্শ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ওই সমিতির শাখা খুলে ম্যানেজারসহ কর্মী নিয়োগ দেন। এসব কর্মী গ্রামে গ্রামে গিয়ে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষজন থেকে আমানত সংগ্রহ করেন। এভাবে অভিযুক্ত জনি মিয়া সুন্দরগঞ্জ ও পীরগাছা উপজেলার শতাধিক গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় ৮ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন।অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, সমিতিটি মানুষের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে প্রথম কয়েক মাস মুনাফা প্রদান করলেও গত ৬ মাস থেকে মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেন। উপায় না পেয়ে কিছু গ্রাহক তাদের আসল টাকা ফেরতের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে কিছুদিন নানা টালবাহানা করে গা ঢাকা দেন সমিতির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবন।

উপজেলার মকসুদ খাঁ গ্রামের ভুক্তভোগী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আমি ঢাকা শহরে মানুষের বাসায় বুয়ার কাজ করি। অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম। সমিতির ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবন লোভ দেখালে তাঁর মাধ্যমে আমি দুই লাখ টাকা রেখেছিলাম। প্রথম ৩ মাস আমাকে লাভ দিলেও এখন লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না।’

একই গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী আজিরন বেগম বলেন, ‘আমি রাস্তার মাটি কাটার কাজ করি। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে ওই সমিতিতে ৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন তাঁরা আমাদের লাভ বা আসল কোনোটাই দিচ্ছে না। আমি সমিতির অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি ম্যানেজার জীবন সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন।’

আরেক ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা জরিনা বেগম বলেন, ‘আমার ভিক্ষা করে জমানো ১ লাখ টাকা সমিতির ম্যানেজার জীবন নিয়েছিল। প্রতি মাসে লাভ দেবে। এখন লাভ-আসল কিছু দিচ্ছে না। সবাই পলাতক। আমি এখন কী দিয়ে চলব।’

সরেজমিনে চৌধুরাণী বাজারে গেলে স্থানীয় হারুনুর রশিদ ও জাহিদুল ইসলাম এশিয়ান টেলিভিশনের প্রতিনিধি কে বলেন, লাখে ২ হাজার টাকা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। টাকা নেওয়ার সময় তারা একটি ফরম পূরণ করে পাসবই দিত। এখন তারা লাপাত্তা। দরিদ্র, অসহায় মানুষদের টাকা যেন প্রশাসন উদ্ধার করে দেয় এটাই চাওয়া।

স্থানীয় কৈকুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম মিয়া বলেন, সমিতির নামে অনেকই সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। এরাও লাখ টাকায় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা কমিশনে লোক নিয়োগ দিয়ে এ ধরনের প্রতারণা করেছে। ওই সমিতির পরিচালক জনি মিয়া এখন পরিবারসহ পলাতক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিতিটির পরিচালক জনি মিয়া ও ম্যানেজার রাসেল মাহমুদ জীবনের বাড়িতে গেলে তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ছামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমি দুই বছর হয় এখানে এসেছি। আমি ২০২১ সালে ওই সমিতি অডিট করেছি। ২০২২ সালে আমার সহকারী করেছে। ২০২৩ সালের জেলা থেকে অডিট হওয়ার কথা। তার আগেই আমরা এসব অনিয়মের কথা জানতে পেরে তাদের নোটিশ দিতে গেলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছে কেউ বলতে পারে না। এখন আমরা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই সমিতির নামে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সমবায় কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যা যা করণীয় তা আমরা করব।’