নিকলীতে দুই পরিবারকে ‘একঘরে’ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান

আব্দুর রউফ ভূইয়া : কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি-কিশোরগঞ্জের নিকলীতে দুটি পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করার প্রতিবাদে এলাকাবাসীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল দুপুরে নিকলী সদরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি নিকলী সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে জেলা প্রশাসক বরাবরে লেখা স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএন ও) নিকট হস্তান্তর করেন । এ সময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সমাজকর্মী আলমগীর হোসেন, কামরুল হাসান, আল আমিন, খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১২ এপ্রিল রাতে নিকলী সদর ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ চত্বরে প্রভাবশালী গ্রাম্য মাতব্বররা ব্যবসায়ী আবু বাক্কার সিদ্দিকের পরিবারকে একঘরে ঘোষণা করেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইদ্রিছ আলী ইদু একঘরে করার ঘোষণা দেন। এ সময় সালিস বৈঠকে মাতব্বর হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন ইদ্রিছ আলীর দুই ভাতিজা নজরুল ও তাজুল, স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আইনুদ্দিন, রফিকুল ইসলাম রফিক প্রমুখ।একঘরে’ হওয়া আবু বাক্কার অভিযোগ করেন, ঈদ উপলক্ষে ওই মসজিদের মুসল্লিদের ধার্য চাঁদা পরিশোধ না করায় শবেকদরের দিনে জুমার নামাজের পর মসজিদের মাইকে ৯১ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। ওই দিনই তিনি তার নামে ধার্য করা এক হাজার টাকা চাঁদা পরিশোধ করেন। এরপরও তার নামসহ চাঁদা পরিশোধ করেননি এমন ৯১ জনের নাম মাইকে ঘোষণা করা হয়। তিনি এর প্রতিবাদ জানান। মুসল্লিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে লজ্জা না দিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে চেয়ে চাঁদার টাকাটা আদায় করা যেত।প্রভাবশালীরা এটিকে রং মেখে ‘মাতব্বরদেরকে গালিগালাজ করা হয়েছে’ বলে মিথ্যা অভিযোগ আনেন। এরই জেরে ১২ এপ্রিল রাতে আবু বাক্কারের পরিবারকে ‘একঘরে’ করা হয়।
এ ঘটনার প্রায় এক বছর আগে একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হামিদের পরিবারকে মাতব্বর ইদ্রিছ আলী ইদুর নেতৃত্বে একই মসজিদ চত্বরে ‘একঘরে’ করা হয়। আব্দুল হামিদ জানান, পৈতৃক জমিজমা নিয়ে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। পরে চাচাতো ভাইয়েরা তাদের প্রায় তিন একর জমি ইদ্রিছ আলী ইদুর ভাই রূপালী ও জাফর আলী মেম্বারের দুই ইটভাটার আওতায় দখল করে নেয়। এ নিয়ে বিচার চাইতে গেলে উল্টো তাকে ‘একঘরে’ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।একঘরে’ করার কারণ সম্পর্কে ইদ্রিছ আলী ইদু বলেন, মসজিদের উন্নয়নে যারা চাঁদা দেননি, মাইকে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে বাক্কারের নামও ছিল। বাক্কার সমাজকে গালাগাল করেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সমাজ তো মারামারি করতে পারে না, ফলে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।
প্রায় এক বছর আগে আব্দুল হামিদকে সমাজচ্যুত করার বিষয়ে ইদ্রিছ আলী ইদু বলেন, সেও তার মা–চাচিকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করেছে। সে সমাজ মানেনি। পরে সমাজের মানুষ তার সঙ্গে আর চলবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আইনবহির্ভূত এমন শাস্তি দিতে পারেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ইদ্রিছ আলী ইদু বলেন, বাপ–দাদার আমল থেকেই আমরা এ রকম সামাজিক বিচার দেখে এসেছি।
একঘরে হওয়া পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা এর বিচার দাবি করেছেন। সমাজকর্মী কামরুল হাসান বলেন, সভ্য সমাজে এখনও একঘরে করার মত বর্বরতা মেনে নেওয়া যায়না।