লামা বন বিভাগের সংরক্ষিত বন ভূমি জবরদখলের চেষ্টা!অপ-প্রচারে লিপ্ত স্বার্থান্বেশী মহল

বেলাল আহমদ,বান্দরবান প্রতিনিধি-বান্দরবানের লামা বন বিভাগের আওতাধীন লামা রেঞ্জের সংরক্ষিত বন ভূমি জবরদখলের চেষ্টা! অপ-প্রচারে লিপ্ত স্বার্থান্বেশী একটি মহল।বমু বিটের দায়িত্বশীল একাধিক বনকর্মীর তথ্য বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের একাধিক সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান,ইউপি সদস্য এবং এলাকার স্থানীয় জনসাধারণের সাথে কথা বলে জানা যায়, বমু বিট এলাকা বমু বিলছড়ি ইউনিয়ন তথা চকরিয়া উপজেলাধীন হওয়ায় ২০০৫ সালের পূর্বে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ভৌগলিক কারনে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ হতে এর দুরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। পাহাড়ি পথে সার্বক্ষনিক নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগের কোন সুযোগ না থাকায় এবং বনাঞ্চলের চারপাশ লামা উপজেলায় বেশষ্টিত হওয়ার বমুবিট এলাকাটি অনেকপূর্ব থেকেই জবরদখলপূর্ণ এলাকা হিসাবে বন বিভাগের নজরদারিতে রয়েছিলো ভৌগলিক কারনে২০০৫ সালে বমু বিট লামা বন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়। বমুবিট এলাকাটি লামা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে আসার পূ্র্ব থেকেই জবরদখল প্রবন হওয়ার দরুন সরকারী বন ও বনভুমি তথা সরকারী সম্পদরক্ষার্থে ২০২১ সনে বনভুমি জবরদখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে তা জেলা প্রশাসক কক্সবাজার জেলা মহোদয়ের কার্যালয়ে উচ্ছেদ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যার বাস্তবায়ন সরকারের দিক নির্দেশনা মোতাবেক প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সরকারী তথ্য মতে বমুবিট মোট বনভুমির পরিমান ২১৭৮.৮৪ একর,তন্মধ্যে সংরক্ষিত বন ভুমির পরিমান ২০২৭. ৪২ একর অবশিষ্ট ১৫১.৪২ একর রক্ষিত বনভুমি। ১৯৮৯-৯০ সন হতে ২০২৩-২৪ সন পযন্ত পর্যায়ক্রমে মোট ১০৩০.০ একর বনভুমিতে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে স্বল্প মেয়াদি প্রজাতির চারা লাগিয়ে নতুন ভাবে বন সৃজন করে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী স্থানীয় জনগোষঠীদের মধ্যে ৯১৭ জন উপকারভোগী নির্বাচন করে চুক্তিপত্র সম্পাদিত করে উপকারভোগীদের বাগান রক্ষনাবেক্ষনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বমু বিট এলাকায় ২০১৬-১৭ সন হতে এ পযন্ত ২৫০.০ একর সামাজিক বনায়নের গাছ সরকারি ভাবে নিলাম করে উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগীদের মাঝে বমু এলাকার জনগনের মধ্যে অভুতপূর্ব সাড়া পরে যায় এবং নিলামে উল্লেক্ষিত ২৫০.০ একর সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রয়ের পর উক্ত স্থানে ২৫০ জন উপকারভোগীদের সম্পৃক্ততায় ২য় আবর্তে পুনরায় ২৫০.০ একর সামাজিক বনায়ন সৃজন করা হয় যা বর্তমানে সফল বাগান ও দৃষ্টি নন্দিত। আগামী অর্থবছরেও বেশ কিছু সামাজিক বনায়ন সরকারি ভাবে নিলামে বিক্রয়ের প্রকৃিয়াধীন আছে যা সম্পন্ন হলে আরো দুইশতাধিক উপকারভোগী বাগানের লভ্যাংশ হাতে পাবেন বলে বন বিভাগ ও বাগানের উপকারভোগীদের নিকট থেকে জানা যায়।
বনভুমি জবরদখল তথা যেকোন বন অপরাধ দমনে বন বিভাগের জিরো টলারেন্স নীতিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা লামা বন বিভাগ মহোদয়ের কঠোর নির্দেশনা দরুন বেশকিছু দিন যাবত স্বার্থান্বেশী মহল বমু বিটের সরকারী বাগানের ক্ষতিসাধন করতে না পেরে এবং বনভুমিতে নতুনকরে জবরদখল করতে না পেরে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের কু-চক্রীমহল লামা বন বিভাগের বমু বিট,লামা রেঞ্জ ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নামে ফেসবুক ও কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত এক পত্রিকায় অসত্য, ভিত্তিহীন, মনগড়া, কাল্পনিক কল্পকাহিনী প্রচার করে আসছে, যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই।
স্বার্থান্বেষী মহলের আশির্বাদপুস্ট তথাকতিত এক সাংবাদিক পরিচয় দানকারী ( যিনি কিনা লামা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রচারিত লামা তালিকাভুক্ত সাংবাদিক নয়) ব্যক্তি কতৃক বন বিভাগের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট বমুবিটের রিজার্ভের সেগুন গাছ অবৈধভাবে কর্তন ও জোতের কাঠের আড়ালে পাচারকাজে বনবিভাগের কয়েকজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৪/০৫/২০২৫ ইং তারিখ চট্টগ্রাম বন সংরক্ষকের দপ্তর হতে গঠিত তদন্ত টিম সরেজমিনে বাগানএলাকা তদন্তে আসেন। তদন্তকালে অভিযোগকারীর অভিযোগ প্রমান করতে ও তদন্ত কাজে সহযোগিতার জন্য অভিযোগকারীকে অনুরোধ জানানো হলেও অভিযোগকারী সরেজমিনে তার অসত্য অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থতা ঢাকতে সুকৌশলে তিনি নিজে আসতে পারবেনা জানিয়ে তার একজন প্রতিনিধি ও লামার একজন সহকর্মীকে তদন্ত টিমের সাথে ট্যাগ করিয়ে দেন।তদন্তটিম অভিযোগকারীর প্রতিনিধিদের মতামত কে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তাদেরকে অভিযোগে বর্নিত ও প্রর্দশিত বমু বিটের বাগান এলাকার কর্তিত গাছের মোথা আলামত দেখানোর আহবান জানালে অভিযোগ কারীর প্রতিনিধি গন দুপুর ১২.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫:০০ ঘটিকা পযন্ত বাগান এলাকা তন্নতন্ন করে খুজেও সদ্যকর্তিত একটি সেগুন গাছের মোথাও দেখাতে পারেন নাই বলে তদন্ত টিমের সাথে থাকা স্থানীয় এক জনপ্রতিধির কাছ থেকে জানা যায়।
এরপরে অভিযোগ কারীর সহকারী একটু আড়ালে গিয়ে তার সাথে থাকা মুঠোফোনে কারো সাথে বেশকিছুক্ষন কথা বলে তদন্ত টিমের নিকট এসে জানায় তাদেরকে কে বা কাহারা হুমকি দিচ্ছে এবং তাদের জানা মতে বমুবিট এলাকায় আর কোন সেগুন বা অন্য কোন গাছের মোথার অস্তিত্ব তাদের জানা নেই বলে তারা জানান। তাদের হুমকি দেওয়ার বিষয়টিও তদন্ত টিম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে লামা রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার কে নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত করার কথাও সরেজমিন উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানান।
রেঞ্জ অফিসার সবাইকে নিয়ে কোন বাধা বিপত্তি ছাড়াই বিকাল ৫:৩০ মিনিটের দিকে বাগান এলাকা ত্যাগ করে তদন্ত কমিটির নির্দেশনামতে তদন্তের দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করেন।ইতিমধ্যে মুল অভিযোগ কারী তার অসত্য, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক অভিযোগ প্রমানে ব্যার্থ হয়ে সরকারী দপ্তরকে অহেতু হয়রানির অভিযোগ হতে রেহাই পাওয়ার কু প্রচেষ্টায় সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তার ফেসবুকে পোস্ট করেন যে, বমু বিটের তদন্ত কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে এবং তার সহকারী কে কিডন্যাপ ও হত্যা করার হুমকি দিচ্ছে রিজার্ভ খেকো কাঠ ব্যবসায়ীরাবন বিভাগের সামনে। অভিযোগকারী সরেজমিনে তার অসত্য অভিযোগ প্রমানে ব্যর্থ হয়ে ফিল্ড পযার্য়ের তদন্ত শেষে লামা বিভাগীয় অফিসে ফেরার পরে তিনি উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে তার ফেসবুকে তার সহকারীকে কিডন্যাপ বা হত্যা ইত্যাদির মতো স্পর্শ কাতর শব্দ ব্যবহার করে পরিবেশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তকাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে তদন্ত টিম কে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালায়। যা তিনি পরবর্তীতে তার ফেসবুকে বিভান্তুিকর অসত্য পোস্ট, ফেসবুক লাইভে বক্তব্য এবং পত্রিকায় প্রকাশ করে তার কুরুচিপূর্ন স্বভাবের পরিচয়ই মুলত প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে বমু বিটের নন্দীরবিলের চড়ুই বিল এলাকার সেগুন বাগানে গিয়ে স্থানীয় চাষী আমির হোসেন ও মোহাম্মদ হোসেন নামক চাষীর সাথে কথা বলে জানা যায় সেগুনবাগানটি ১৯৯১-৯২ সনে সৃজিত এবং ২০১৭ সালের পূর্বেই প্রায় অর্ধেক পরিমান সেগুন বাগান বিনস্ট হলে সেখানে ২০১৭-১৮ সনে ১০. ০ হে: সামাজিক বনায়ন সৃজন করে ২৫ জন উপকারভোগী, ও তাদের কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন এবং সেক্রেটারী আবু বক্করের দায়িত্বশীল পাহারা এবং তাদের গাছ রক্ষনাবেক্ষনের পাশাপাশি অবশিষ্ট আনু : ১০. ০ পরিমান সেগুন বাগানেও পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে ঐ বাগানে আর কোন গাছ কাটাকাটি হয় নাই ফলে সেগুন বাগানটি যে কোন ব্যক্তিরই পছন্দের বাগান । এছাড়াও পানিস্যাবিল ওয়েদ্দারঘোনা এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ২০১০-১১ সনে বন বিভাগ ১০.০ সেগুনবাগান সৃজন করে ২৫ জন উপকারভোগীদোর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব দেওয়ায় সেটিও একটি সফল বাগানে পরিনত হয়। তবে উক্ত ১০.০ সেগুন বাগানের গাছের বয়স্মাত্র ১৩/১৪ বছর তাই বাগানের গাছগুলির ম্যাচুরিটি আসে নাই।উপকারভোগীদের পাহারার দরুন বাগান টি ধীরে ধীরে সফল বাগানে পরিনত হচ্ছে।
লামা জোত মালিক ও একাধিক কাঠ ব্যববসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বমু বিটে মাত্র ২০.০ হেক্টরের মতো সেগুন বাগান আছে এবং তা অক্ষত ও দৃষ্টিনন্দন। লামা বন বিভাগ সরকারের বিধি অনুসরন পুর্বক জোত ভুমির শুধুমাত্র সেগুন,গামার ও কড়ই প্রজাতির কাঠ কর্তন করার অনুমতি দিয়ে থাকে এবং তাতে বনের কাঠ মিশানোর কোন সুযোগ নেই।ব্যবসায়ীরা বমুবিটের কোন গাছ চুরি হলে তাৎক্ষনিক ভাবে তা উদ্ধারে সদা তৎপর।কাঠ ব্যবসায়ীগন আরো বলেন আদিল আহমেদ নামক তথাকথিত সাংবাদিক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে বিশেষ সুবিধা চেয়ে আল্টিমেটাম দেন তাকে চাঁদা না দিলে কেউ কাঠের ব্যাবসা করতে পারবে না। মুলত অসৎ উদ্দেশ্যে লামা বন বিভাগের বমু বিটকে কেন্দ্র করে যে ভিত্তিহীন, কাল্পনিক প্রকাশিত হয়েছে তার সাথে বমু বিটের বাস্তবতার কোন মিল পাওয়া যায়নি। সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় অসত্য, মনগড়া,ভিত্তিহীন পরিবেশনে একদিকে যেমন লামা বন বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে, অন্যদিকে লামা জোত মালিক ও বমু বিটের উপকারভোগী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের মান সম্মান ক্ষুন্ন করার চেষ্টা করেছে, যা সকলের জন্যই মান হানিকর।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান,যেকোন বন অপরাধ দমনে বন বিভাগ জিরো টলারেন্সে কাজ করছে,বনবিভাগ
গত বছরে নিয়মিত বিভিন্ন অভিযানে বমু বিটে বিবিধ গোলকাঠ ৩৫৬ ঘনফুট,বিবিধ জ্বালানী কাঠ ৫৬১ ঘনফুট,বিবিধ বল্লী ৫৭৯ রানিং ফুট,বিবিধ খুটি ৮৫ টি বনজদ্রব্য জব্দ করে ৩১টি বন মামলায় ৬২ জনকে আসামি করে মামলা রুজু করা হয়েছে।আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।