# Tags

গেজেটেড পদে নন-গেজেটেড কর্মকর্তা: প্রশ্নের মুখে রেলওয়ে নীতি

আব্দুস সালাম, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥ দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন, দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীনতম যোগাযোগ কেন্দ্র। অভিযোগ উঠেছে বছরের পর বছর ধরে এই স্টেশনের প্রশাসনিক নিয়ম ভঙ্গ করেই চলেছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত গ্রেড থ্রী রেলওয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবিএম জিয়াউর রহমান।

অভিযোগ রয়েছে ২০১৮ সালে গ্রেড-থ্রি স্টেশন মাস্টার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত এবিএম জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন রেলওয়ে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে। অথচ এই পদটি রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী কেবলমাত্র গেজেটেড (ক্লাস-১/২) কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু বাস্তবতায়, গত ৭ বছর ধরে তিনি এই পদে বহাল রয়েছেন।

রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী, সুপারিনটেনডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা। গ্রেড-থ্রি স্টেশন মাস্টারের দায়িত্ব শুধু স্টেশন পরিচালনায় সীমাবদ্ধ, যা গেজেটেড কর্মকর্তাদের পূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষমতার তুলনায় অনেক কম। এই অবস্থায় এবিএম জিয়াউর রহমানের নিজেকে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে দাবি করা রেলওয়ের প্রশাসনিক নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়মের নামে লঙ্ঘনঃ- দি রেলওয়ে এক্ট- ১৮৯০ ধারা ১৪৫ অনুযায়ী দায়িত্বের অপব্যবহার শাস্তিযোগ্য। কন্ডাক্ট রুল-১৯৭৯ ক্ষমতার বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা সরকারি দুরাচরণ। ডিসিপ্লিন- ২০১৮ ভারপ্রাপ্ত শব্দটি অস্থায়ী, ৭ বছর নয়। পেনাল কোড – ১৮৬০, সেকশন-১৭০ নিজেকে গেজেটেড অফিসার সাজিয়ে দায়িত্ব নিলে তা অপরাধ।

এবিএম জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে স্টেশনের পরিবেশ ও সেবা মানের অবনতি ঘটেছে। টিকেট ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, এবং স্টেশনের অবকাঠামোগত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব উল্লেখযোগ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

স্থানীয় এক যাত্রী বলেন, আগে স্টেশনে সেবা ভালো ছিল। এখন সবকিছুই অনিয়মে চলছে। এ ব্যাপারে দিনাজপুর রেলওয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবিএম জিয়াউর রহমানের কনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে অভিযোগ উঠেছে জিয়াউর রহমানের অনিয়ম সম্পর্কে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত থাকার পরও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। রেলওয়ের আইন অনুযায়ী, এ ধরনের প্রশাসনিক অনিয়মে দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে এসব নিয়ম মেনে চলার কোনো উদাহরণ দেখা যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে এ ধরনের অনিয়ম চলতে দেওয়া সাধারণ যাত্রী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি অন্যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে স্টেশনের পরিবেশ ও সেবার মান উন্নত হয় এবং যাত্রীদের হয়রানি বন্ধ করা যায়। দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে এটি দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। রেলওয়ের শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জরুরি।