# Tags

তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে বিদায় নিলেন ইটনার মনু 

মুহাম্মদ কাইসার হামিদ, কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ):‎
‎”মানুষ মরলে দাফনটা যেন ঠিকঠাক হয়, এইটুকুই আমার দায়িত্ব।” – মনু চাচার একান্ত বিশ্বাস।

‎ইটনা উপজেলা আজ শোকবিহ্বল। ‎চলে গেলেন এমন এক মানুষ, যিনি জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন অন্যের মৃত্যুর শেষ প্রহরের সাথী হয়ে।
‎শনিবার (২৮জুন) সকাল সাড়ে ১০টায়, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন মনু চাচা। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
জীবদ্দশায় তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়ে গেছেন তিনি।
‎মনু চাচা ছিলেন এক অদ্ভুত নিঃস্বার্থ হৃদয়ের মানুষ। কবর খুড়ে কোনোদিন টাকা নেননি, কোনোদিন ক্লান্তি প্রকাশ করেননি। এক জীবনে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের কবর খুঁড়েছেন। কারও মৃত্যুর খবর পেলেই, দেরি না করে নিজের ঘোড়া নিয়ে চলে যেতেন কবর খুঁড়তে।
‎বাড়ি থেকে অনেক দূরেও যদি মৃত্যু ঘটত, তবুও তিনিই পৌঁছে যেতেন সবার আগে। তিনি বলতেন ‎“এই কাজ আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি” এমন নিঃস্বার্থ সেবা আজকাল সমাজে প্রায় বিলুপ্ত।
‎তাঁকে কখনো কবর খোঁড়ার জন্য দামাদামি করতে দেখা যায়নি। কেউ যদি কিছু দিতে চাইত, বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিতেন। বলতেন “আল্লাহই দেবেন। মানুষের দোয়া পেলেই আমি খুশি।”
‎নিজের কবর খুঁড়ে যাননি, কিন্তু এখন শুয়ে আছেন চিরশান্তিতে: মনু চাচা নিজের কবর প্রস্তুত করেননি। কিন্তু তিনি চির নিদ্রায় শায়িত হবেন সেই মাটিতেই, যেখানে অসংখ্য মানুষের কবর খুঁড়েছেন নিজের হাতে।
‎তাকে শেষ দেখা দেখতে গিয়ে কান্নাভেজা চোখে অনেকেই বলছিলেন, “তিনি ছিলেন মৃত্যুর পর জীবনের সবচেয়ে দরকারি মানুষ।” আজ উনি নেই, কিন্তু রেখে গেলেন মূল্যবোধ।”
‎মনু চাচার এই মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তি হারানোর শোক নয়। এটি একটি মানসিকতা, একটি সমাজচেতনামূলক মূল্যবোধের অন্তর্ধান। তাঁর মতো নিঃস্বার্থ মানুষ আর ক’জনইবা থাকেন?
‎তিনি প্রমাণ করে গেছেন, মানুষের জন্য কিছু করলে, সেটা পত্রিকার হেডলাইন নয়, মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকে।
ইটনার মানুষ আজ একা। মনু চাচার ঘোড়ার টগবগ শব্দ আর শোনা যাবে না কোনো দাফনের দিনে।
কিন্তু তাঁর জীবন-গাথা থেকে নতুন প্রজন্ম শিখবে, মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই প্রকৃত মহত্ব।